মনজুর মোর্শেদ তুহিন (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
সরকার পরিবর্তনের পরও কুয়াকাটা পৌরসভায় প্রকৌশল বিভাগের অনিয়ম থামছে না। খোদ পৌরসভার ভেতরেই গড়ে উঠেছে প্রকৌশলীদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের প্রভাবে দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কাজ পাচ্ছেন না অনেক ঠিকাদার। এতে একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে রাষ্ট্র, অন্যদিকে জনস্বার্থে ঘটছে ব্যাঘাত।
পৌরসভার বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির চেয়ারম্যান সহকারী প্রকৌশলী মো. নিয়াজুর রহমান ও সদস্য সচিব উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সুজনের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বাহ্যিকভাবে কিছু প্রকল্পে কাজ ভালো মনে হলেও ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের উপকরণ।
ঠিকাদার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, কুয়াকাটা পৌরসভা থেকে আহ্বানকৃত একটি দরপত্রে (আইডি: ১০০৪২৫৪) সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি কাজ পাননি। যাচাই-বাছাই না করেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়, যা সরকারি ক্রয়বিধি (পিপিআর) লঙ্ঘন। এ নিয়ে গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ পৌর প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিলেও তিনি কোনো সাড়া পাননি।
বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ টাকার একটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে কার্যাদেশ ইস্যু করা হয় ১৫ নভেম্বর ২০২৪। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এলেও আজও এর ভৌত বা আর্থিক অগ্রগতি শূন্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৪৪০ মিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ২০০-২৫০ মিটার এলাকায় ইট ফেলা হয়েছে। কাজের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
স্থানীয়দের দাবি, যেখান থেকে সড়কটি শুরু হয়েছে তা প্রয়োজনীয় এলাকার বাইরে; বর্ষায় সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পেও একই অনিয়ম দেখা গেছে। উদ্বোধনের আগেই গত ২৯ মে সমুদ্রের জোয়ারে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক ভেঙে পড়ে। ব্যয় হয়েছিল ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
সহকারী প্রকৌশলী মো. নিয়াজুর রহমান এর আগেও পটুয়াখালী পৌরসভায় দায়িত্বে থাকাকালে অডিটোরিয়াম নির্মাণে অতিরিক্ত বিল অনুমোদনের মাধ্যমে দুর্নীতিতে জড়ান। বিষয়টি তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। আরও কয়েকটি অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুন ক্লোজিংয়ের পর মো. নিয়াজুর রহমান ও মো. সুজন নিজেদের বদলির জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাদের সিন্ডিকেটের কারণে পূর্বের ফেলে রাখা প্রকল্পগুলোরও হবে নিম্নমানের বাস্তবায়ন এবং সরকারি অর্থের অপচয়।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সহকারী প্রকৌশলী নিয়াজুর রহমান বলেন, সর্বনিম্ন দরদাতার কাগজপত্র ঠিক না থাকায় দ্বিতীয়জনকে কাজ দেওয়া হয়েছে। মেরিন ড্রাইভ নতুন করে নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর দুর্নীতির মামলায় আমি ৫ নম্বর আসামি, সাজা হলে আগে অন্যদের হবে।”
প্রকল্পের বর্তমান ঠিকাদার মো. জাফর বলেন, গাইড ওয়ালসহ কিছু কাজ হয়েছে। রাস্তার মাঝখানে কালভার্ট, ব্লক, জিও ব্যাগ না দিলে এক বছরের মধ্যেই রাস্তা সাগরে বিলীন হয়ে যাবে। তাতে আমার জামানত আটকে যেতে পারে।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ইয়াসিন সাদেক বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই অভিযোগ এসেছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।